গঠনতন্ত্র, নির্বাচন ও কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নগরের ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে ঘোষণা করা হয়েছে কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিও।
ভোটার তালিকা, তফসিল ঘোষণা, কোনপ্রকার নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন ছাড়াই উচ্চমহলের চাপে রাতের আঁধারে এই দুই কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর এসব কারণে ছাত্র সংসদ ও কলেজ ছাত্রলীগে পদ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী পদ থেকে ইতোমধ্যে অব্যাহতি নিয়েছেন। এ অবস্থায় কলেজের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে যার স্বাক্ষরে ছাত্র সংসদের কমিটি অনুমোদন হয়েছে তিনি নিজেই তার স্ব-পদে অবৈধ। তিনি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তাফা মোর্শেদ। গত বছরের ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের এক রিটে তার পদটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অবৈধ অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে গঠিত কমিটিও অবৈধ। তারা অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের কমিটি চান।
এর আগে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কলেজ ছাত্র সংসদের সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফা মোরশেদ ২০১৯-২০ সালের ছাত্র সংসদ অনুমোদন করেন৷ এ কমিটিতে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি (সহসভাপতি) নির্বাচিত হয়েছেন ফয়সাল সাব্বির, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) সৈয়দ ইবনে জামান ডায়মন্ড এবং এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) হিসেবে মো. নোমান সাইফ নির্বাচিত হয়েছেন৷
এছাড়া বার্ষিকী সম্পাদক ফরহাদ জামান লিংকন, নাট্য সম্পাদক মো. এস এম আশরাফুল আরিফ, বক্তৃতা ও বিতর্ক সম্পাদক আজাদ হোসেন অপু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আকমান রসুল মিলু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল আমিন, ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুর রহিম জিসান, ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক এস এম বিশাল, সমাজ সেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আরাফ চৌধুরী, ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদক প্রিমিলা প্রিয়তী। এছাড়াও কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে ইয়াছিন আরাফাত, মো. শাহীন ও মো. মোজাম্মেলকে।
তবে এ কমিটির মধ্যে ইতোমধ্যে চারজন স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। তারা হলেন- নাট্য সম্পাদক মো. এস এম আশরাফুল আরিফ, ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুর রহিম জিসান, ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক এস এম বিশাল ও সদস্য মো. শাহীন।
অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিতে দেখা যায়। এছাড়াও এ কমিটির দুইজনের ছাত্রত্ব নেই। তারা হলেন- বার্ষিকী সম্পাদক ফরহাদ জামান লিংকন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল-আমিন। আল-আমিন ইসলামিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করলেও বর্তমানে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
এদিকে নবগঠিত কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতেও আছে নানা অসঙ্গতি। নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর স্বাক্ষরিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন রাকিবুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মীর মো. ইমতিয়াজ।
কমিটিতে সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়া মনিরুল হক মুন্না ও নুরুল আফসারের কলেজে ছাত্রত্ব নেই। আরেক সহসভাপতি সাইদুর রহমান পাবেল ও আইন বিষয়ক সম্পাদক লক্ষণ দাশ বিবাহিত। সহসভাপতি অশোক দাশ চাকরি করেন চট্টগ্রাম বন্দরে। সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়া কাজী আসিফ আলভী স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন কমিটি থেকে।
এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল ইসলাম তানভীর করেন ব্যবসা। সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রিদোয়ানুল হক আলভীর বাবা ২৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এ কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেওয়ারা হলেন- প্রচার সম্পাদক মিঠুন দাশ, দপ্তর সম্পাদক মো. খোকন, অর্থ সম্পাদক আনাচ আন্না, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আরিফ উদ্দিন ও উপ-স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাজীব শীল।
অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক এস এম বিশাল বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কেন অব্যাহতি নিয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মো. ইউনুস জয়নিউজকে বলেন, আমাদের সময় সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু এবার রাতের অন্ধকারে ও উপর মহলের প্রভাবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। কলেজের গণতন্ত্রকামী কোনো শিক্ষার্থী এ কমিটি মেনে নেয়নি। অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটির দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জয়নিউজকে বলেন, কলেজ ছাত্র সংসদের কমিটি গঠন করতে চাইলে কলেজের গভর্নিং বডির অনুমতির প্রয়োজন হয়। নির্বাচন কারা পরিচালনা করবে এবং নির্বাচন কমিশনার কে হবেন, সেটি ঠিক করতে হয়। ভোটার তালিকা করে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। সর্বোপরি সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। কিন্তু এবারের কমিটিতে সেসব কিছুই হয়নি। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শুধুমাত্র স্বাক্ষর করেই কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এভাবে কমিটি অনুমোদন দেওয়ার নজির এ কলেজে আর কখনো হয়নি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যে পদে বহাল আছেন সে পদটিই অবৈধ। গত বছর আমি আসার পরে তাকে তিন সপ্তাহের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এখনো সে পদে বহাল আছেন। এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হলে- এ পদটিতে তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তাই অবৈধ পদে থেকে তিনি কোনো কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন না।
গত বছরের ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদকে তার পদে অবৈধ ঘোষণা করেন। এ রায়ের অনুলিপি জয়নিউজের হাতে রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদকে তার মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।