আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলল নগর ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সোমবার সকাল ১১টায় শুরু হওয়া বৈঠকে অবসান হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের দূরত্ব। আর রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাউকে না জানিয়ে ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম কলেজের মত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের কমিটি!

- Advertisement -

যে দিনে নগর আওয়ামী লীগ একসঙ্গে আসন্ন নির্বাচন ও নগরীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার বিষয়ে একমত হন, সেই রাতেই আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের মত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটি ঘোষণাকে ঐক্য বিনষ্টের প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

- Advertisement -google news follower

এ কমিটিতে যেমন ঠাঁই হয়েছে শিবির কর্মীর, তেমনি ঠাঁই হয়েছে অছাত্রদের এই অভিযোগ তুলে ২৫ জনের কমিটির ছয় সদস্য ইতিমধ্যে করেছেন পদত্যাগ। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম কলেজের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। রাতের আঁধারে কলেজ ছাত্রলীগে তৈরী হয় স্পষ্ট গ্রুপিং।

জানা গেছে, সোমবার রাতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয় কমর উদ্দিন, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী টুটুল, মনিরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, ওবায়েদুল হক, মোস্তফা কামাল, জাবেদুল ইসলাম জিতু, মোক্তার হোসেন রাজু ও শাজাহান সম্রাটকে। যুগ্ম সম্পাদক করা হয় সাদ্দাম হোসেন চৌধুরী, ইউসুফ কবির, স্বরূপ রায় সৌরভ ও উথিলা মারমাকে।

- Advertisement -islamibank

এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন খাদেমুল ইসলাম দুর্জয়, হায়দার আলী, মোহাম্মদ বেলাল ও আনন্দ মজুমদার। দপ্তর সম্পাদক পদে আবদুল কাদের হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক পদে জামাল উদ্দিন সোহেল, উপ-প্রচার সম্পাদক পদে আবু নাঈম মো. হাসান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে তারেকুল ইসলাম খান, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক পদে খন্দকার নায়েবুল আজম, উপ শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রিফাত হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর এ কমিটি অনুমোদন করেন।

এ কমিটি প্রত্যাখান করে নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া মো: বেলাল বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ ছাড়াই চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এ কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি আরও বলেন, শিবির, অছাত্র ও বহিরাগতদের নিয়ে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ কমিটি গঠন করেছেন। আমরা এ কমিটি মানি না।

বেলালের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান নেতারা দায়িত্ব নিয়েই ঘোষণা দিয়েছেন, পারিবারিক ঐতিহ্য, সংগঠনের প্রতি ত্যাগ, অন্যকোন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা বিভিন্ন বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই নেতা বানানো হবে ছাত্রলীগের। নেওয়া হবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ। কিন্তু চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ নীতি মানেননি মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা।

কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর জয়নিউজকে বলেন, তিন দশক পর চট্টগ্রাম কলেজে জয় বাংলা স্লোগানের আওয়াজ তুলতে পেরেছে ছাত্রলীগ। এ কলেজের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আমন্ত্রণ থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল। ছাত্রলীগের যে ক’জন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী জীবনবাজি রেখে এ কলেজে প্রগতির ঝান্ডা তুলে ধরেছে তাদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদুল করিম ও সুভাষ মল্লিক সবুজ।

তিনি বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের দেওয়া তালিকা থেকেই এ কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি হওয়ায় এ পদে সবাইকে পদায়ন করা সম্ভব নয়। নগর ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর সবাই যোগ্য। তাই বলে কি সবাইকে সভাপতি ও সম্পাদক করা যাবে? নগর আওয়ামীলীগের কোন নেতা যদি অভিযোগ তোলেন তাহলে আমি ওনাকে বলবো, হয়তো আপনার দেওয়া তালিকা থেকে আমরা কাউকে সভাপতি সম্পাদক করতে পারিনি। কিন্তু কমিটিতে রাখিনি তা আপনি বলতে পারবেন না।

নগর আওয়ামী লীগের ঐক্য প্রক্রিয়ার মুহূর্তেই এই কমিটি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে দস্তগীর বলেন, আওয়ামী লীগের মত ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের ছাত্রলীগের একটি থানা পর্যায়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অস্বস্তিতে পড়ার কোন সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের কমিটির সাথে অন্যকিছুকে মিলিয়ে ফেলানো উচিত হবে না।

এদিকে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিবির নেতারাও সরকার দলীয় এ সংগঠনের কমিটিতে পদ নিয়ে সৃষ্টি করছে বিশৃঙ্খলা। যে কারণে খুন, প্রতিপক্ষের হাত কেটে নেওয়া, হামলাসহ নানান অপরাধের অভিযোগ উঠছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

তারা আরও বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসে, ছাত্রলীগে শিবিরের আধিপত্য বৃদ্ধির কারণেই সংগঠনটির এই করুণ দশা। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করেন। নিজ হাতে যাচাই বাছাই করেই গঠন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি। যা ছাত্রলীগের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী জয়নিউজকে বলেন, দল এখন নির্বাচনমুখী। আমরা সবাই মাঠে নেমেছি জনগণের কাছে দলের উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে। সারা দেশে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো কাজ করছে একই উদ্দেশ্যে। ঠিক এই সময়ে নগর আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে পরামর্শ না করে চট্টগ্রাম কলেজের কমিটি ঘোষণা করা কাম্য ছিল না। যে কাজ করলে সংগঠনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে সে কাজ নির্বাচনের আগে করা সংগঠনের চেতনার পরিপন্থী।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর শিবিরের পক্ষ হয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিল তাদের কেউ কেউ এ কমিটিতে ছাত্রলীগের পদ পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের না জানিয়ে রাতের আঁধারে এমন কমিটি গঠন কাম্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম শিবিরকে বিতাড়িত করে যে কলেজটিতে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে কলেজে সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সোমবার সকালে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা যখন এক টেবিলে বসলো ঠিক সেদিন রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগ নেতাদের না জানিয়েই চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের একপেশে কমিটি গঠন নগর আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলবে।

জানা যায়, ১৯৮১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা। ১৯৮৪ সালের ২৮ মে ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতা শাহাদাত হোসেনকে কলেজ ছাত্রাবাসে গলা কেটে হত্যা করে শিবির। এরপর থেকে এ কলেজে একক আধিপত্য বিস্তার করে তারা। ওই বছর ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ চক্রবর্তী সুজনকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

জয়নিউজ/হোসেন

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM