ট্রেনের ‘টিকিট ব্ল্যাকিং’ ঠেকাবে এনআইডি

বাংলাদেশ রেলওয়ে। একটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যাত্রীবান্ধব পরিবহন। যাত্রী তার প্রচুর। কোনো ট্রেনের কোনো সিট কখনো ফাঁকা গিয়েছে, এমন উদাহরণ বিরল। অথচ, সহজলভ্য নয় টিকিট। কেন? টিকিট ব্ল্যাকিং! এই নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন:-

ভদ্রলোক কাছে এলেন। মুখ বাড়িয়ে কানের পাশে ভালো মানুষের মতো করে বললেন, ‘ভাই লাগবে? আমার কাছে দুইটা ‘এসি’ আছে। এক্সটা লাগবে কিন্তু!’

- Advertisement -

বাহ! মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!

- Advertisement -google news follower

উত্তরে বলা হলো, ‘ভাই, কোন কোন ট্রেনের টিকিট আছে আপনার কাছে? কয়টা? দাম কত করে নিচ্ছেন?’ মুখের ভাবটাই পাল্টে গেল তার। চোখে স্পষ্ট সন্দেহ। ‘কিসের টিকেট? আমাকে কি আপনার ব্ল্যাকার মনে হয়?’ বললেন, তবে উত্তর শোনার জন্য দাঁড়ালেন না ভদ্রলোক। প্রতিবেদন তৈরীর জন্য তথ্য সংগ্রহের পুরো সময়ে ওই ভদ্রলোকের দেখাও মেলেনি আর!

চট্টগ্রামসহ দেশের প্রতিটি স্টেশনে টিকিট ব্ল্যাকারদের এমন দৌরাত্ম্য এখন নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। কাউন্টারে টিকিট না মিললেও স্টেশনে গেলেই দেখা মেলে ভদ্রবেশী কিছু টিকিট ব্ল্যাকারের। আবার স্টেশনের আশেপাশের নির্দিষ্ট কিছু দোকানেও পাওয়া যায় কাউন্টারে অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়া টিকিটের দেখা! তবে তা কিনতে হয় চড়া দামে, অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ মূল্যে!

- Advertisement -islamibank

ট্রেনের ‘টিকিট ব্ল্যাকিং’ ঠেকাবে এনআইডি | Bangladesh Railway

বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলের টিকিট ক্রয় ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির ব্যবহার টিকিট কালোবাজারী বন্ধ করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এদেশে রেলের টিকিট যার কাছে বিক্রি হচ্ছে, সেই ব্যক্তিকেই যে ভ্রমণ করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অথচ প্রতিবেশী ভারতসহ উন্নত বিশ্বে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংযুক্ত টিকিটধারী যাত্রীই কেবল ক্রয়কৃত রেলের টিকিটে ভ্রমণ করতে পারেন। অথচ বাংলাদেশে এমন কোন উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পি) ওমর ফারুক জয়নিউজকে বলেন, রেলের টিকিটের কালোবাজারী ঠেকানো কঠিন। একজন ব্যক্তি একাধিক টিকিট কিনে পরে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি করছে। জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ব্যবহার করে টিকিট ক্রয় বাধ্যতামূলক করা হলে টিকিটের এই কালোবাজারী বন্ধ করা হবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, সোনার বাংলা এখন দেশের সবচেয়ে আধুনিক ট্রেন। গত বছরের জুন-জুলাই মাসে ৪৬টি ট্রিপে সোনার বাংলা ট্রেনটি ২৩ হাজার ৫৭৯ জন যাত্রী পরিবহন করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ১১ হাজার ৫৮৭ জন এবং ঢাকা থেকে ১১ হাজার ৯৯৭ জন যাত্রী ওঠেন। ট্রেনটি গড়ে প্রতি যাত্রায় ৫১২ জন করে যাত্রী পরিবহন করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বিরতিহীন আরেকটি ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস গড়ে ৯১ থেকে ৯৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। এই ট্রেনগুলোর মধ্যে সোনার বাংলার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বগিতে আসনের ভাড়া ১ হাজার টাকা। অন্যদিকে সুবর্ণের ভাড়া ৭২৫ টাকা। সোনার বাংলার এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ১১০ টাকা এবং শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬০০ টাকা। সুবর্ণের এসি বার্থ নেই। তবে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৮০ টাকা। সোনার বাংলায় যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করা হলেও সুবর্ণ এক্সপ্রেসে তা করা হয় না।

কথা হলো চট্টগ্রাম স্টেশন মাস্টার মাহবুবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘ট্রেনের যাত্রী সেবা আগের চেয়ে বাড়লেও টিকিট স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্টেশনের বাইরে কিছু কালোবাজারী সক্রিয়। তবে তাদের নিষ্ক্রিয় করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে। ভারতের রেল ব্যবস্থার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই টিকিটের কালোবাজারী বন্ধ হোক। টিকিট করার সময় যদি জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে কালোবাজারী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব হবে।’ একইসাথে যাত্রীর তুলনায় টিকিটের অপ্রতুলতা কাটাতে ট্রেনের সংখ্যা ও বগি বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

জয়নিউজ/হোসেন/ধৃতরাষ্ট্র

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM